চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স ২০২৩ বিপিএলে কেমন খেলবে তার প্রেডিকশন নিয়েই আমাদের আজকের আর্টিকেল।
২০১২ সালের প্রথম বিপিএলে অংশগ্রহণকারী প্রথম দলগুলোর মধ্যে একটি ছিল চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স। এটি আসলেই দৃষ্টিকটু যে, দলটি কখনো বিপিএলের শিরোপা জিততে পারে নি। কারণ বেশির ভাগ মৌসুমেই চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স ভালো ক্রিকেট খেলেছে ও দর্শকের মন জয় করেছে। বিপিএলের গত দুই আসরে চট্টগ্রামের দলটি সবচেয়ে ধারাবাহিক ছিল, দুটিতেই নক আউট পর্ব খেলে তারা।
এই আর্টিকেলে, চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স আগের আসরগুলোতে কেমন পারফরম্যান্স করেছিল তার সার্বিক পর্যালোচনা করা হবে। এছাড়াও আমরা ২০২৩ মৌসুমের জন্য কিছু আপডেট এবং বিভিন্ন বিষয় বিবেচনায় চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্সের টিম প্রেডিকশন নিয়ে আলোচনা করবো।
বিপিএলে পূর্বের রেকর্ডসমূহ
২০১৩ মৌসুমে বহুল প্রত্যাশিত বিপিএলের ফাইনালে উঠেছিল চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স। এছাড়াও দলটি ২০১৬, ২০১৯, ২০২০ এবং ২০২২ মৌসুমে প্লে অফ খেলেছিল। তবে শিরোপা আর ছুঁয়ে দেখা হয় নি চট্টগ্রামের।
চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স ২০১২, ২০১৫, এবং ২০১৭ সালে দর্শকদের প্রত্যাশা পূরণে ব্যর্থ হয়। এতটাই বাজে খেলা প্রদর্শন করে যে তারা গ্রুপ পর্বই অতিক্রম করতে পারে নি। এখন চলুন চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্সের গত আসরের স্কোয়াডটি দেখে নেওয়া যাক।
চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স স্কোয়াড ২০২২
- নাসুম আহমেদ (বাংলাদেশ)
- বেনি হাওয়েল (ইংল্যান্ড)
- বেনি হাওয়েল (ইংল্যান্ড)
- উইল জ্যাকস (ইংল্যান্ড)
- শরিফুল ইসলাম (বাংলাদেশ)
- আফিফ হোসেন (বাংলাদেশ)
- আফিফ হোসেন (বাংলাদেশ)
- মুকিদুল ইসলাম (বাংলাদেশ)
- চ্যাডউইক ওয়ালটন (ওয়েস্ট ইন্ডিজ)
- রিয়াদ ইমরিত (ওয়েস্ট ইন্ডিজ)
- রেজাউর রহমান রাজা (বাংলাদেশ)
- সাব্বির রহমান (বাংলাদেশ)
- মৃত্যুঞ্জয় চৌধুরী (বাংলাদেশ)
- মেহেদী হাসান (বাংলাদেশ)
- আকবর আলী (বাংলাদেশ)
- নাঈম ইসলাম (বাংলাদেশ)
- এনামুল হক (বাংলাদেশ)
- জাকির হাসান (বাংলাদেশ)
২০২২ মেীসুমে উপর্যুক্ত প্লেয়াররা চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্সের জার্সি গায়ে মাঠে নামেন।
বিপিএল ২০২১-২২ মেীসুমে চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্সের পারফরম্যান্স
বরিশালের বিপক্ষে চার উইকেটে ম্যাচ হেরে বিপিএল ২০২২ মৌসুম শুরু করেছিল চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স। তবে পরের ২ টি ম্যাচেই দূর্দান্ত খেলা করে চট্টগ্রাম। ঢাকা ও খুলনার বিপক্ষে টানা দুই জয় তুলে নেয় চট্টগ্রামের দলটি।
গ্রুপ পর্বে চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স পাঁচটি ম্যাচে জয় লাভ করে এবং একই সংখ্যক ম্যাচে হেরে যায়। তবে ৫ টি ম্যাচের জয়ই দলটিকে টুর্নামেন্টের প্রথম চারটি দলের একটি হয়ে পরবর্তী ধাপে যেতে সহায়তা করে। পয়েন্ট টেবিলের তৃতীয় স্থানে থেকে গ্রুপ পর্ব শেষ করে চট্টগ্রাম। একমাত্র এলিমিনেটরে খুলনা টাইগার্সকে হারিয়ে কোয়ালিফায়ার খেলার যোগ্যতা অর্জন করে পোর্ট সিটির প্রতিনিধিত্বকারী দলটি। তবে কোয়ালিফায়ারে যেয়ে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের কাছে পরাজয় বরণ করতে হয় চট্টগ্রামকে। সাত উইকেটের জয় নিয়ে ফাইনালে জায়গা করে নেয় কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স এবং পরে তারা বিপিএল ২০২২ আসরের চ্যাম্পিয়নও হয়।
আমরা যদি সার্বিকভাবে চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স টিমের পারফরমেন্স পর্যালোচনা করি, তবে এটি বলতেই হবে যে দলটি এই আসরে খুব একটা খারাপ ক্রিকেট খেলে নি।
২০২২ আসরে চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্সের দূর্দান্ত পারফর্মার
চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স দলে বাংলাদেশ জাতীয় দলের শীর্ষস্থানীয় ও প্রতিভাবান কিছু ক্রিকেটার ছিলো এই আসরে। এছাড়াও ২০২১-২২ বিপিএলে ভালো পারফরম্যান্স করে অনেক তরুণ কিক্রেটার আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পা রাখে।
স্থানীয় খেলোয়াড়রা দলের সাফল্যে সবথেকে বেশি অবদান রেখেছিল। পুরো টুর্নামেন্টে মেহেদি হাসানের বোলিং ছিল চোঁখে পড়ার মতো। তিনি, নাসুম আহমেদ, এবং শরিফুল ইসলাম টুর্নামেন্টে চট্টগ্রামের হয়ে বেশির ভাগ উইকেটই ভাগাভাগি করে নেন। টুর্নামেন্টের সর্বোচ্চ উইকেট শিকারীর তালিাকায় ছিলেন নাসুম ও মেহেদি।
বিদেশী খেলোয়াড়দের মধ্যে বেনি হাওয়েল এবং উইল জ্যাকস প্লেয়িং 11-এর নিয়মিত মুখ ছিলেন। উভয় খেলোয়াড়ই চোঁখ ধাধানো সব ইনিংস উপহার দেন। যার ফলে তারা দলের অপরিহার্য অংশ হয়ে ওঠেন।
দলের সাথে স্বল্প সময়ে থেকে এক বা দুটি ভালো ইনিংস খেলেছিলেন এমন আরেক খেলোয়াড় হলেন চ্যাডউইক ওয়ালটন। টুর্নামেন্টের শেষভাগে দলের সঙ্গেই ছিলেন তিনি।
আমাদের চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স টিম প্রেডিকশনে দলের পারফরম্যান্সের সারসংক্ষেপ এখানে।
লক্ষণীয় বিষয় এটি যে, চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স দলে বাংলাদেশ এবং অন্যান্য দেশের তরুণ খেলোয়াড়দের একটি দুর্দান্ত সংমিশ্রণ ঘটেছিল। একই সাথে তাঁরা খুবই ভালো পারফর্মও করেছিল কিন্তু অভিজ্ঞতার অভাবের কারণে চাপ সামলাতে না পেরে বেশ কিছু ম্যাচে হার বরণ করে।
২০২৩ বিপিএলে চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্সের টিম প্রেডিকশন
গত মেীসুমে চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স দলের হয়ে বেশিরভাগ খেলায় অংশগ্রহণকারী বিদেশী খেলোয়াড়রা হলেন বেনি হাওয়েল এবং উইল জ্যাকস। বেনি হাওয়েল এবারও চট্টগ্রামের হয়ে খেলতে পারেন কারণ এখনও পর্যন্ত তিনি অন্য কোথাও সাইন করেন নি।
জ্যাকস সম্প্রতি পাকিস্তানের বিপক্ষে জাতীয় দলের হয়ে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট খেলেছেন। তাঁর ২০২৩ মেীসুমে না খেলার সম্ভাবনাই বেশি। খেলতে পারলেও পুরো টুর্নামেন্টে নাও থাকতে পারেন তিনি।
ওয়ালটনকে চাইলে দলের জন্য পুরো সময় পাওয়া যেতে পারে। তবে, চট্রগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স টিম ম্যানেজমেন্ট কি চাইবে সেটির উপর অনেক কিছুই নির্ভর করবে। কোন কোন প্লেয়ারকে তারা রিটেইন করবে সেটিই ঠিক করে দেবে উইল জ্যাক ও ওয়ালটনের দলে থাকার বিষয়টি।
বাংলাদেশ জাতীয় দলের খেলোয়াড়দের মধ্যে আফিফ ও মেহেদি হাসানকে চট্টগ্রাম অবশ্যই ছাড়তে চাইবে না। বিশেষ করে আফিফের সাম্প্রতিক ফর্ম তাকে অবশ্যই দলের রাখার পক্ষেই মত দেবে।
তবে মেহেদি হাসান মিরাজকে ছেড়ে দিতে পারে দলটি, কারণ গত মেীসুমের মাঝ পথে টিম ম্যানেজমেন্টের সাথে মনোমালিন্য হয় মিরাজের। যে কারণে তাকে অধিনায়কত্ব থেকেও সরিয়ে দেওয়া হয়।
তবে শরিফুল ও নাসুমের ক্ষেত্রে একটু ঝামেলা পোহাতে হতে পারে চট্টগ্রামকে। তারা সম্প্রতি দূর্দান্ত পারফর্ম করছেন, যেকারণে অন্যান্য ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলো থেকে তাঁরা আকর্ষণীয় অফার পেতে পারেন।
চট্রগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স এখনও পর্যন্ত কিছু ঘোষণা করেনি, তবে ড্রাফট থেকে মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যান এবং ভালো মানের একজন বোলার নেওয়ার চেষ্টা করবে দলটি। ড্রাফটের আগেই চট্টগ্রাম চাইবে কিছু বড় প্লেয়ারদের সাথে ডিরেক্ট সাইনিং এ যেতে। এক্ষেত্রে পাকিস্তান, ইংল্যান্ড, আফগানিস্তান এবং ওয়েস্ট ইন্ডিজ এর ক্রিকেটারই অগ্রাধিকার পাবেন, সেটি বলার অপেক্ষা রাখে না।
.